বঙ্গোপসাগরে মিথেন গ্যাসের সন্ধান

বঙ্গোপসাগরে মিথেন গ্যাসের সন্ধান

7987

বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে মিথেন গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এফেয়ার্স ইউনিট। একইসঙ্গে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২২০ প্রজাতির সি-উইড (Seaweed), ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার ‘গ্যাস হাইড্রেন্ট ও সামুদ্রিক জেনেটিক সম্পদের ওপর গবেষণার ফলাফল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।

এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আশা করছি, অতি দ্রুত এই গ্যাস হাইড্রেট উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জ্বালানি ক্ষেত্রে নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইস অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) মোহাম্মাদ খুরশেদ আলম।

প্রেস ব্রিফিংয়ে মোহাম্মাদ খুরশেদ আলম বলেন, ‘অফশোর জ্বালানি, সুনীল বায়োটেকনোলজি গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেট এবং মেরিন জেনেটিক রিসোর্স বিশেষত সি-উইড এর সম্ভাবনা, উপস্থিতি, প্রকৃতি ও মজুদ নির্ণয়ের জন্য দুটি গবেষণা কার্যক্রম যথাক্রমে যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ২২০ প্রজাতির সি-উইড, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করা হয়।’

গ্যাস হাইড্রেট তথা মিথেন গ্যাস মূলত উচ্চচাপ ও নিম্ন তাপমাত্রায় গঠিত জমাট বরফ আকৃতির এক ধরনের কঠিন পদার্থ, যা স্তূপীকৃত বালির ছিদ্রের ভেতরে ছড়ানো স্ফটিক আকারে অথবা কাদার তলানিতে ক্ষুদ্র পিন্ড, শিট বা রেখা আকারে বিদ্যমান থাকে। মহীসোপানের প্রান্তসীমায় ৩০০ মিটারের অধিক গভীরতায় সমুদ্রের তলদেশের নিচে গ্যাস হাইড্রেট পানি ও মাটির চাপে মিথেন বা স্ফটিক রূপে বিরাজ করতে দেখা যায়। যা সাধারণত ৫০০ মিটার গভীরতায় স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। স্থিতিশীল গ্যাস হাইড্রেট সমৃদ্ধ এ অঞ্চলটি সমুদ্রের তলদেশ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সমুদ্রে যে সব অঞ্চলে ইতোমধ্যে জরিপ করা হয়েছে সে অঞ্চলের তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে সম্পূর্ণ সমুদ্রাঞ্চলে সিসমিক জরিপের প্রয়োজন ছিল, যা অনেক ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সম্পন্নকরা সিসমিক জরিপের ওপর ভিত্তি করেই এ ডেস্কটপ স্টাডি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে বিশেষ করে ভারতের কৃষ্ণ-গোদাভারী এবং মহানন্দা বেসিনে বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেটের মজুদের সম্ভাবনা বিষয়ে ভারত ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। কৃষ্ণ-গোদাভারী এবং মহানন্দা বেসিন এলাকায় প্রতিবছর প্রায় ১-২ বিলিয়ন টন মিশ্রিত তলানি জমা হয়। ভারত ইতোমধ্যে কৃষ্ণ-গোদাভারী এবং মহানন্দা বেসিনে এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে তিনটি স্থানে কূপ খনন করেছে। মহানন্দা বেসিনে সাগরের তলদেশে ২০৫ মিটার নিচে ২৫ মিটার পুরু একটি স্তরে প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

২০১১ সালে জাতিসংঘে মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক কমিশনে বাংলাদেশের পেশকরা দাবি সম্বলিত সাবমিশনটি প্রস্তুতের প্রাক্কালে সরকার ২০০৭-২০০৮ সালে বঙ্গোপসাগরে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৫০০ লাইন কি. মি. এবং ২০১০ সালে একটি ডাচ্ প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রায় ৩ হাজার লাইন কি. মি. সিসমিক ও ব্যাথিম্যাট্রিক জরিপ শেষ করে। এ জরিপগুলোর মাধ্যমে ৩৫০ নটিক্যাল মাইলের ভেতরে মহীসোপানে ৬ হাজার ৫০০ লাইন কি.মি. পর্যন্ত সমুদ্রাঞ্চলে বিদ্যমান সম্পদ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে যা বাপেক্স, পেট্রোবাংলা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটে সংরক্ষিত রয়েছে। এ সব জরিপের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই ডেস্কটপ স্টাডিটি পরিচালনা করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Rayhan